রোববার, ১৫ জুন ২০২৫ | ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিশেষ প্রতিবেদন

লাখ লাখ মানুষের সমাগমে চাঙা সিলেটের পর্যটন ব্যবসা

সিলেট প্রতিনিধি
১৩ ঘণ্টা আগে

সিলেটে বেড়ানোর উপযুক্ত সময় বর্ষা মৌসুম। কিন্তু এবার পঞ্জিকার হিসাবে বর্ষা ঋতু শুরু হওয়ার আগেই দফায় দফায় বৃষ্টি নামায় বর্ষার আমেজ এসে গেছে। নদ-নদী, হাওর-খাল–বিল সব জায়গা নতুন পানিতে ভরেছে। টইটম্বুর পানিতে পর্যটনকেন্দ্রগুলো মোহনীয় রূপ পেয়েছে। এ রকম অবস্থায় ঈদের লম্বা ছুটি মিলেছে। তাই বেড়ানোর মওকা পেয়ে অনেকেই দেশের শীর্ষস্থানীয় পর্যটন গন্তব্য সিলেটে ছুটে এসেছেন।

স্থানীয় প্রশাসন ও পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষার আমেজে সিলেটের পর্যটন ব্যবসা এবার চাঙা হয়ে উঠেছে। গত দেড় সপ্তাহে অন্তত সাড়ে ৮ লাখ পর্যটক এসেছেন এই জনপদে। হোটেল-রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ ও পরিবহন খাতের পাশাপাশি চা-পাতা, মণিপুরি কাপড়, সাতকরা ও আচার কেনাবেচাসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব ব্যবসা বেশ জমে উঠেছে। এতে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তাঁরা ধারণা করছেন।

জানতে চাইলে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ফয়েজ হাসান  বলেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে ঈদের ছুটি কিংবা পর্যটন মৌসুমের শুরুতে এবারই সবচেয়ে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। সিলেটের সব কটি পর্যটনকেন্দ্রেই উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যও জমেছে। মৌসুমের শুরুতেই এমন রমরমা অবস্থায় খুশিতে আছেন এখানকার পর্যটন খাত–সংশ্লিষ্ট সবাই।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের চার জেলায় শতাধিক পর্যটনকেন্দ্র আছে। আর ভ্রমণ পর্যটনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শতাধিক দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট। পর্যটনকেন্দ্র ছাড়াও সিলেট নগরে অবস্থিত হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার এবং সিলেটের গোলাপগঞ্জের শ্রীশ্রী চৈতন্য দেবের পৈতৃক ভিটায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষ সিলেটে আসেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকেন্দ্রিক ট্যুরিজমের পাশাপাশি ধর্মীয় ট্যুরিজম বিবেচনায় পারিবারিক ও ব্যক্তিগত ট্যুরের জন্য অনেকেরই এখন পছন্দের জায়গা সিলেট। সাধারণত সিলেটের চার জেলায় বছরে ২০ থেকে ২৫ লাখ পর্যটক আসেন। এর মধ্যে সিলেটে আসেন ১২ থেকে ১৩ লাখ। বাকি জেলাগুলোর মধ্যে মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে প্রায় ৫ লাখ করে ১০ লাখ এবং হবিগঞ্জে প্রায় ২ লাখ পর্যটক আসেন। তবে এবার মৌসুমের শুরুতেই চার জেলায় পর্যটকের ঢল নেমেছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘সিলেটে এবারের ঈদের ছুটিতে কমপক্ষে ৫ লাখ পর্যটক এসেছেন। এতে পর্যটন খাতে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হয়েছে। যেহেতু পর্যটন মৌসুম কেবল শুরু হয়েছে, সেহেতু চলতি বছর বিপুল পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে আশা করছি।’

সিলেট ছাড়া অন্য তিন জেলায় ঈদের ছুটিতে কী পরিমাণ পর্যটক এসেছেন কিংবা কেমন ব্যবসা-বাণিজ্য হয়েছে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান স্থানীয় প্রশাসনের কাছে পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই মৌসুমের শুরুতে সবচেয়ে বেশি পর্যটক এসেছেন। এর মধ্যে সিলেটে ৫ লাখ, মৌলভীবাজারে ২ লাখ এবং সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় দেড় লাখ পর্যটক এসেছেন। চার জেলায় পর্যটন খাতে কমপক্ষে আড়াই হাজার কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হয়েছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।

ষড়্‌ঋতুর দেশ বাংলাদেশে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসকে বর্ষাকাল বলা হয়। পঞ্জিকা অনুযায়ী শনিবার পয়লা আষাঢ়। অর্থাৎ কাগজে–কলমে আজ থেকে শুরু হচ্ছে এ বছরের বর্ষাকাল।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বিলাসবহুল হোটেল-রিসোর্ট আছে। এসব রিসোর্ট ও হোটেলের একাধিক স্বত্বাধিকারী জানান, ৯ থেকে ১২ জুন পর্যন্ত তাঁদের কোনো বেড, মানে শয্যা ফাঁকা ছিল না। প্রায় সব পর্যটক আগাম বুকিং দিয়ে হোটেল-রিসোর্টে এসে অবকাশযাপন করে গেছেন। এখনো বেশির ভাগ হোটেল-রিসোর্ট ‘হাউসফুল’ রয়েছে।

শ্রীমঙ্গলের বিলাসবহুল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফের জনসংযোগ কর্মকর্তা পলাশ চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে স্যুটসহ ১৩৫টি কক্ষ আছে। ঈদের ছুটিতে পাঁচ দিনের সব কদিনই অতিথি ছিলেন।

এদিকে শুক্রবার সকালে সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকার তিনটি জনপ্রিয় রেস্তোরাঁয় গিয়ে দেখা গেছে, সব কটিতেই মানুষের ভিড়। কোথাও বসার জায়গা নেই। একদল নাশতা করছেন তো অন্য আরও অনেকে খাবার খেতে বাইরে অপেক্ষা করছেন। যাঁরা খাচ্ছেন তাঁদের প্রায় ৯৫ শতাংশই পর্যটক। নাশতা সেরেই তাঁরা নির্দিষ্ট পর্যটনকেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা হন।

সিলেটের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র কোম্পানীগঞ্জের ‘জল-বিছানার শয্যা’খ্যাত সাদা পাথর এবং গোয়াইনঘাটের জলাবন রাতারগুল ও জাফলংয়ে গতকাল সকাল থেকেই বিপুলসংখ্যক পর্যটক ভিড় জমান। সেখানকার পর্যটনসংশ্লিষ্ট পাঁচজন ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি স্পটে সকালেই হাজারো পর্যটক হাজির হয়েছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যটক বেড়েছে। শনিবার ছুটির দিনেও এসব পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের ঢল থাকবে বলে তাঁরা আশা করছেন। এই পর্যটকেরা ঘুরে বেড়ানো ও খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় দোকানগুলো থেকে পছন্দের জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক ও রাজস্ব) দেবজিৎ সিংহ বলেন, সিলেটের বৈচিত্র্যে ভরা সৌন্দর্য দেখতে এবার বিপুলসংখ্যক পর্যটক ছুটে এসেছেন। এতে পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে। স্থানীয় প্রশাসনও পর্যটকদের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে।

বান্দরবানে পর্যটক নিখোঁজের ঘটনায় পর্যটন সংস্থার প্রধান গ্রেপ্তার
বরিশাল: পর্যটনশিল্পের নতুন সম্ভাবনা

আপনার মতামত লিখুন